ফটোগ্রাফি লইয়্যা দুই চাইর কথা

ফটোগ্রাফি জিনিসখান কী? খায় নাকি মাথায় দেয়!  ইহা লইয়্যা ব্যাপক ত্যানা প্যাচাইবার নিমিত্তে এই লেখার প্রারম্ভ। ফটোগ্রাফি শুরু করবার পত্থম দিন থেইক্যা কীভাবে ট্যাকা ট্যুকা কামাইবেন সে এক্সক্লুসিভ টিপস খান থাকিবে আমার লেখার সর্বশেষ লাইনে।

প্রথমে আসা যাক ফটোগ্রাফি কাহারে বলে-

“আলো বা অন্য কোনো রকমের তাড়িৎ-চৌম্বকীয় বিচ্ছুরণকে (electromagnetic radiation) কাজে লাগাইয়া টেঁকসই ছবি সৃষ্টি করবার যে শিল্প, বিজ্ঞান ও পদ্ধতি— তাহাকেই বলে ফটোগ্রাফি”

এই সংজ্ঞা যদি মাথার উপর দিয়া যাইয়া থাহে তাইলে একবাটি মুড়ি লইয়া বইস্যা আপনাগো ক্যামেরার শার্টার টিপাটিপি শুরু কইরা দেন তাইলেই ফটোগ্রাফি হইয়া যাইবো আর আপনেও একজন ফটোগ্রাফার হইয়া যাইবেন।

যদি জিজ্ঞেস করেন ফটোগ্রাফি শব্দটা আইলো কই থেইক্যা আমাগো মাথায় কাঁঠাল ভাঙতে, তাইলে কইতে হয়- ইংরেজি “photography”  আইছে গ্রিক φωτός (phōtos) (φῶς (phōs) শব্দ থেইক্যা বা “আলো” এবং γραφή (graphé) বা “লাইনের দ্বারা প্রকাশ” বা “অঙ্কন” শব্দ থেইক্যা। দুটি শব্দ রে জোড়া লাগাইলে অর্থ দাঁড়ায় “আলো দিয়ে আঁকা”।

আপনে আলো দিয়া আঁকেন কিংবা আলো ছাড়াই আঁকেন (ফুডুশপ আর ফুডুশপ) কুনু ব্যাপার না, ব্যাপার হইলো আপনের একখান ক্যামেরা থাইকতে হইবো। যার শাটার টিইপ্যা শুধু ফটো খিচবেন এইসব কিচ্ছু জানবার দরকারও বা কি!দ

ফোকাস, অ্যাপারচার, শাটার স্পিড, হোয়াইট ব্যালান্স, মিটারিং, আইএসও স্পিড, ফোকাস পয়েন্ট এত ট্যাকনিক্যাল ব্যাপার স্যাপারও আপনের জানবার কুনু দরকার আছে বইল্যা মনে হয় না এই লাখ ট্যাকা দামী ক্যামেরার যুগে। ক্যামেরা যত দামী ফটো তত ভাল। ভালো ফটো হইলো বেশী বেশী ঝাপসা ছবি (মানে হইলো বোকেহ টা চিরটাকালই বোকাই রইয়া গেলো আর চালাক হইবার পারলো না) তুলতে পারবেন এই লইয়্যা চিন্তার কুনু কারন নাই।

আমরা দুই চোক্ষে পৃথিবী দেহি, ক্যামেরা দেহে এক চোক্ষে। দ্বিনেত্র দৃষ্টি আর একনেত্র দৃষ্টির পৃথিবী অবশ্যই আলাদা তো হইবোই। তাই ফটোখিচার লাইগ্যা এই কম্পোজিশিন টিশন এত্ত জানবার দরকারই আছে বইল্যা মনে হয় না। ক্যামেরার ডাইনামিক রেঞ্জ আর চোক্ষের ডাইনামিক রেঞ্জ তো আর এক নয় তাই এত ডিটেইলস লইয়া চিন্তার কাহিনি কি… পৃথিবীখান যথেষ্ট জটিল তাই এত্ত সিম্পল ছবি তুইল্যা কি করবেন… গোল্ডেন রেশিও,  ব্যালেন্স, নেগেটিভ স্পেইস, ওভারল্যাপিং, ফোরগ্রাউন্ড, ব্যাকগ্রাউন্ড এত্ত এত্ত বিষয় লইয়া চিন্তা করার টাইমই কই?

তাই হেনরী কার্টিয়ের ব্রোসো কহিয়াছেন-

To photograph is to hold one’s breath, when all faculties converge to capture fleeting reality. It’s at that precise moment that mastering an image becomes a great physical and intellectual joy.

যাক সে সব কথা, ফটোগ্রাফিরে যে কয় ভাগ করুম সেইটা লইয়্যা যখন ব্যাপক চিন্তায় মশগুল তহন এক ছুডু ভাই কল দিয়া কইলো ভাইজান খালি আপনের ক্যামেরা খান ধার দেন, দ্যাখবেন আমি কি রকম সেলেব্রেটি ফটোগ্রাফার হইয়া গেছি, আমি তহন ভাগের চিন্তায় মশগুল হইয়া একখান রাম-লক্ষন ধমক দিয়া কইলাম যা ভাগ… কিছুক্ষুণ পরে দেহি টুং কইরা আমার ফেইসবুকের নটিফিকেশনের আওয়াজ। `ছুডুভাই`আপনারে `ছুডূ ভাই ফটোগ্রাফি` পেইজে আমন্ত্রণ জানাইছে। আমি তো তহন আর্কেমিডিসের মতো “ইয়ো-ইয়ো-রেখা”  বইল্যা ছুট মারিলাম,ভাগ্যিস পরনে কাপড় চোপড় আছিলো।

তার থেইক্যা বুঝবার পারলাম মুলত ফটোগ্রাফার হইলো ২ প্রকার

১। যার আমুক-তমুক ফটোগ্রাফি বইল্যা একখান ফেইসবুক পেইজ আছে

২। যার কুনু ফেইসবুক পেইজ নাই।

ইদানিং আরেক প্রকার ফটোগ্রাফার চোক্ষে পড়ে খুব বেশী তাহারা হইলেই বিবাহ বাড়ির ফটোগ্রাফার। ইয়ে বড় বড় ভাব লইয়্যা কান্দে বিশাল সাইজের ল্যান্স সহকারে চলাফেরা করে, বিয়ে বাড়িতে সব সুন্দরী ললনারা যাহাদের ভাইয়া ভাইয়া ডাইক্যা জান কুরবান কইরা দেয়।

ভাব তো লওনেরই জিনিস, চিইত কাইত ফটোগ্রাফারই হোন বা তথাকথিত বেইলছাড়া আর্ট ফটোগ্রাফারই হোন।

সুসান সনটাগ” কহিয়াছিলেন-

বন্দুকের মহৎ চেহারা লইয়া ক্যামেরা যেমন হাজির হইয়াছে, ক্যামেরা তাক কইরা ফটোখিচা তাও তেমনি মহিমান্বিত খুনের মর্যাদা পাইয়াছে, আলতো এক খুন, যা বিষাদ আর ভয়ার্ত সময়ের লাইগ্যা একবারে জুতসইয়া।

সুসান তো আর জাইন্তো না আইকের দুইন্ন্যাই ফটোশপ বইল্যা একখান জিনিস আবিস্কার হইবে যাহা দিয়া তামাম ফটোগ্রাফি কর্ম একক্লিকেই কইরালওয়া যাইবে যে ক্যামেরাই আর ক্লিক ম্লিক করোন লাগবো না।

শার্ল বোদলেয়ার” কহিয়াছিলেন-

আলোকচিত্রীরা, তুমরা কখনোই শিল্পী হইতে পারবানা। তুমরা আসলে নকলনবিস ছাড়া কিছুইনা।

এই শার্ল বেটা ক্যাম্নে যে টাইম মেশিনে চইড়্যা আইজকের দুইন্ন্যার ফটোগ্রাফারগো দেইখ্যা গেছিলো হেইডার চিন্তায় চিন্তায় আমার প্যাডের ভাত হজম হইয়া গেছে।

বহুত লিখছি আর পারুম না, এহন আপনাগোরে ট্যাকা ট্যুকা কামানের ধান্দাটা শিখাইয়া দিয়া আমার প্যাচানো ত্যানায় গিট্টু লাগাইতেছি । নিচের ইংরেজীতে লেখা লাইনটা পইড়া লন নিজ দায়িত্বে তাইলে শিইখ্যা যাইবেন কি ভাবে ট্যাকা ট্যুকা কামাইবেন সহজেই-

“The quickest way to make money at photography is to sell your camera.”

“”এই লেখাখানা  “বিভূঁই” নামক সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছে…””